ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমাশীলতা

প্রকাশঃ মার্চ ১০, ২০১৫ সময়ঃ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

wpid-forgivness4-300x197আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধিমত্তা দান করেছেন। আর বুদ্ধিমত্তার দাবি হচ্ছে দায়িত্বশীলতা। একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা যত বেশি থাকবে, তিনি তত বেশি দায়িত্বশীল। তিনি নারী বা পুরুষ, যা-ই হোন না কেন। বুদ্ধিমত্তা না থাকলে দায়িত্ব থাকে না। ছোট শিশুদের দায়দায়িত্ব নেই।

কারণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটেনি। উন্মাদকে কোনো কিছুর জন্য দায়ী করা যায় না। কেননা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য হারিয়ে গেছে। যা হোক, আমাদের মানবসত্তার একটি অংশ হলো আমরা ভুল করে থাকি।

মাঝে মধ্যে আমরা অনিচ্ছাকৃত ভুল করি। তবে কখনো কখনো আমরা জেনেশুনে এবং ইচ্ছা করেই পাপকাজ করি এবং অন্যদের ব্যাপারে ভুল করে থাকি। একটা কথা আছে, ভুল করা মানবিক ব্যাপার এবং ক্ষমা করা আল্লাহ-প্রদত্ত গুণ। এই কথাটির উভয় অংশই অত্যন্ত সত্য। মানুষ হিসেবে আমরা দায়িত্বশীল ঠিকই; তবে আমাদের ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। তাই আমরা সর্বদাই আল্লাহতায়ালার ক্ষমার প্রত্যাশী।

ইসলাম দুই ধরনের ক্ষমার কথা বলে। ক. আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং খ. মানুষের করা ক্ষমা। দুটোই আমাদের দরকার। এর কারণ হলো আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন ভুল করে বসি, তেমনি ভুল হয় মানুষ হিসেবে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বেলায়।

আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালার অনেক নামের উল্লেখ আছে। এগুলোকে বলা হয় ‘আসমাউল হুসনা’ বা সবচেয়ে সুন্দর নাম। নামগুলো প্রকাশ করছে আল্লাহ তায়ালার বিভিন্ন ও বহুমুখী গুণ ও বৈশিষ্ট্য। তাঁর, কয়েকটি নাম করুণা ও ক্ষমার সাথে সংশ্লিষ্ট। এ ধরনের নামগুলোর ওপর আলোকপাত করা যাক।

১. আল গফুর (সর্বাধিক ক্ষমাশীল)। আল কুরআনে নামটি এসেছে ৭০ বারেরও বেশি। এই নামের একই উৎস থেকে আরো কিছু নাম এসেছে আল্লাহ তায়ালার। যেমন, গাফির ও গফফার। আরবি ভাষার ‘গাফারা’ শব্দটির অর্থ আবৃত করা, কিংবা গোপন করা। এর থেকে এসেছে তাৎপর্যবাচক কয়েকটি শব্দ। যেমন ক্ষমা করা, অব্যাহতি প্রদান, নিষ্কৃতি প্রভৃতি। আল্লাহ এ সব কিছু করে থাকেন। কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ শিরক ক্ষমা করেন না (তওবা না করলে), তবে তিনি যার ব্যাপারে ইচ্ছা করেন, তার অন্য সব গুনাহ বা পাপ মাফ করে দিতে পারেন’ (সূরা আন নিসা, আয়াত-১১৬)। আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা লাভের উদ্দেশ্যে আমাদের উচিত তাঁর দিকে রুজু হওয়া।

২. আল আফ্উ। এটা ক্ষমার আরেক অংশের সাথে সম্পর্কিত। কুরআনে নামটির উল্লেখ রয়েছে পাঁচবার। শাব্দিকভাবে ‘আফ্উ’ মানে, উপশম, পুনঃস্থাপন, অব্যাহতিদান, মুক্ত করা। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ হলো, আমাদের পাপ ও ভ্রান্তির কারণে যে শাস্তিপ্রাপ্য, এর বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়া; অথবা পাপ ও ভুলের মাধ্যমে আমরা নিজেদের যে মর্যাদা হানি করেছি, এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা। আল কুরআনে কোনো কোনো সময়ে আফউ ও গফুর উভয় নামই এসেছে একসাথে।

৩. আল তাওয়াব (তওবা বা অনুশোচনা গ্রহণকারী)। আল্লাহর এই নাম কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে ১১ বার। আল্লাহ তায়ালা তাদের তওবা কবুল করে নেন, যারা আন্তরিকতার সাথে তওবা করে এবং প্রত্যাবর্তন করে তাঁর দিকে। ‘তাওয়াব’ শব্দটি দ্বারা বোঝায় ‘প্রায়শ প্রত্যাবর্তনকারী’। এর তাৎপর্য হলো আল্লাহ বারবার তওবা কবুল করে থাকেন। তারপর আবার আমরা গুনাহ করি, ভুল করি। তবুও আমরা তওবা করলে তিনি দয়াবশত তা গ্রহণ করে থাকেন। এভাবে আমাদের আরো একবার সুযোগ দেন সত্যের পথে ফিরে আসার।

৪. আল হালিম (ধৈর্যশীল)। কুরআন শরিফে এই নাম ১৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামের তাৎপর্য হলো, আল্লাহ তায়ালা বিচার করে ফেলার জন্য তাড়াহুড়া করেন না। তিনি বান্দাদের সময় দেন। তিনি পরিচয় দেন ধৈর্যশীলতার, যাতে তাঁর বান্দারা তাঁর দিকে ফিরে আসে।

৫. আল রাহমান ও আল রাহিম (সর্বাধিক করুণাময় ও দয়ালু)। কুরআনে আল্লাহতায়ালার এই দু’টি নাম সবচেয়ে বেশি এসেছে। আল রাহমান এসেছে ৫৭ বার। আর আল রাহিম এর দ্বিগুণ ১১৫ বার। আল রহমান ইঙ্গিত দেয়, আল্লাহর করুণা বিপুল। আল রাহিম বোঝায়, আল্লাহ তায়ালা সব সময়ই করুণাময় বা দয়ালু। তিনি ভালোবাসা ও করুণায় পরিপূর্ণ।

আল কুরআন শেখায় যে, আল্লাহ হলেন বিচারক। তিনি শাস্তিও দিয়ে থাকেন। আল কুরআন অনুসারে আল্লাহর ন্যায়বিচার হচ্ছে, তিনি কাউকে অহেতুক বা অতিরিক্ত শাস্তি দেন না বা দেবেন না। তিনি কারো ভালো কাজকে উপেক্ষা করবেন না। তবে কোনো পাপীকে ক্ষমা করার ইচ্ছা করলে তাঁর এটা করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। আল্লাহ তায়ালার করুণা অপরিসীম এবং তাঁর ভালোবাসারও নেই সীমা-পরিসীমা।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G